কালেরকন্ঠ : আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের উল্লেখযোগ্য সব গণমাধ্যমই আজকের নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোটের জয়লাভের ব্যাপারে আভাস দিয়েছে। এর কারণ হিসেবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নকেই তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে এক দশক ধরে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য তাঁর নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়। একই সঙ্গে ব্যবসাবান্ধব নীতির কারণে দেশের ব্যবসায়ীরা তাঁকে আবারও ক্ষমতায় চান বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তুলে ধরা হয়। তবে সব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনেই এ সরকারের আমলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়াসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।

গতকাল শনিবার হংকংভিত্তিক চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংসতা ঠেকাতে শনিবার দেশজুড়ে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেকর্ড চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হতে চলেছেন। প্রতিবেদনটিতে নিরাপত্তা বাহিনীর ছয় লাখ সদস্য মোতায়েনের কথা উল্লেখ করে বিরোধী দলের নেতাদের ব্যাপক ধরপাকড়ের অভিযোগগুলোও তুলে ধরা হয়।

বার্তা সংস্থা এপি ও ওয়াশিংটন পোস্টের প্রায় অভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাপক উন্নয়নের কারণে শেখ হাসিনা রেকর্ড চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেদন দুটিতে শেখ হাসিনার জঙ্গি দমন অভিযান ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়গুলো প্রশংসা করা হয়।

শুক্রবার প্রকাশিত মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় নিয়ে যেতে পারে। তাতে বলা হয়, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্রমেই বেড়েছে। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে দেশের বিভিন্ন কম্পানি। ভিয়েলটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ডেভিড হাসানাতের বরাত দিয়ে ওই সংবাদমাধ্যম বলছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতিতে সাহায্য করছে। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো থাকলেও, দেশটির সরকার বিরোধীদের দমন-পীড়নের অভিযোগে সমালোচিত হচ্ছে।

মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস এই নির্বাচনকে ‘টিকে থাকার লড়াই’ আখ্যা দিয়ে গত ১০ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেছে। তাতে বলা হয়, এক দশক ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ফলে ২০০৯ সালের ১০ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারের অর্থনীতি ১০ বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ২০১৮ সালে ২৫ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। তবে বিগত কয়েক বছরে বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার ও কারাবন্দি করার মধ্য দিয়ে বিরোধীদের ওপর অভিযান জোরালো করেছে আওয়ামী লীগ।

সিএনএনের খবরে নির্বাচনকেন্দ্রিক উত্তেজনার বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। শেখ হাসিনার উন্নয়ননীতির প্রশংসা করা হলেও বাক্স্বাধীনতা সীমিতকরণের সমালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুর্বল বিরোধী দলের কারণে শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন বলে ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফের খবরে নির্বাচনী প্রচারণার সহিংসতার প্রসঙ্গ সামনে এনে শেখ হাসিনার বিজয়ী হওয়ার আভাস দিয়েছে। তবে তাদের প্রতিবেদনে বিরোধী দলের প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে লৌহমানবী আখ্যা দিয়ে মার্কিন সাময়িকী টাইমসের খবরে বলা হয়, অসাধারণ উন্নয়নের কারণে শেখ হাসিনা রেকর্ড চতুর্থবারের মতো বিজয়ী হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত হওয়ার প্রসঙ্গও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য স্টেটসম্যানের খবরে নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার খবর সামনে আনা হয়েছে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে একটি জরিপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, নানা বিতর্ক সত্ত্বেও শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসছেন বলে আশা করা হচ্ছে। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনাকে লৌহমানবী আখ্যা দিয়ে ফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। দুটি পত্রিকার প্রতিবেদনেই দেশের অর্থনীতির ব্যাপক উন্নয়ন এবং মানব উন্নয়ন সূচকে প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।